জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম: জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে কি কি লাগে সেই সম্পর্কে যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই লেখা। আজ আমরা আপনাকে জানিয়ে দিবো, জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে কি কি কাগজ লাগে, জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে কত টাকা লাগে, জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে কত সময় লাগে সেই সম্পর্কে।
জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে কি কি লাগে
একজন মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হলো তার জন্ম নিবন্ধন। এই জন্ম নিবন্ধন হলো একজন মানুষ যে সেই দেশের নাগরিক তার প্রমান পত্র। আর তাই জন্মের পরে প্রতিটি শিশুর ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামুলক।
সেজন্য জন্ম নিবন্ধন করাতে প্রতিটি নাগরিকদের সচেতন থাকা উচিত। শিশু জন্মগ্রহণ করার ৪৫ দিনের মধ্যেই তার জন্মনিবন্ধন তৈরী করা বাধ্যতামুলক। কারন, ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা সম্পূর্ন ফ্রী। কিন্তু ৪৫ দিন পরে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা অনেক খরচ সাপেক্ষ।
জন্মনিবন্ধন তৈরী করতে অনেক কাগজের দরকার পড়ে। জন্ম নিবন্ধন তৈরী করার সময় অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত। কারন জন্ম নিবন্ধন তৈরীর সময় একটু কোথাও ভুল হলে তা সংশোধন করতে আপনাকে পরে অনেক হয়রানির সিকার হতে হবে।
এবং যদি আপনার ভুলটা বড় হয় তাহলে জন্ম নিবন্ধনটি সম্পূর্ন বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক জন্ম নিবন্ধন তৈরী করতে সঠিক কাগজের প্রয়োজন হবে। নাহলে ভুল কাগজের জন্য জন্ম নিবন্ধন ভুল হয়ো যেতে পারে।
আর তাই আজ আমি আপনাদের দেখাতে চলেছি জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম ও জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে সম্পূর্ন বিস্তারিত আলোচনা ও করতে চলেছি।
আরও পড়ুন – অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন কি?
২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী একজন শিশু বা মানুষের লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, স্থান, বাবা-মার নাম কম্পিউটার বা হিসাব রক্ষকের খাতায় রেজিস্টার করে জন্ম সনদ প্রদান করাকেই জন্ম নিবন্ধন বলে। অর্থ্যাত, একটি শিশু জন্ম নিলে সে ছেলে কি মেয়ে সেটা নির্নয় করে তার বাবা মার নাম ঠিকানা ও শিশুটি কবে জন্মগ্রহণ করেছে সেটি সরকারের রেজিষ্ট্রেশন অংশে প্রদান করে উক্ত শিশুটির জন্ম সনদ গ্রহন করাকে জন্ম নিবন্ধন বলে।
এই নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠীর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামুলক। ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রনয়ন হলেও ২০০৬ সাল থেকে জন্ম নিবন্ধন আইন বাস্তবায়ন করা হয়। আর তখন থেকে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার ৪৫ দিনের মধ্যে তাকে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামুলক।
যদি কোন কারনে কোন শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন না করতে পারে ও কোন শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে ২ বছরের বেশি সময় পার হয়ে যায় তাহলে সেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে পরবর্তীতে জরিমানা দিতে হতে পারে।
জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজনীয়তা কোন কোন ক্ষেত্রে
প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব আইডেন্টিটি থাকে। আর এই আইডেন্টিটি তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কারও যখন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে না তখন জাতীয় পরিচয়পত্র এর জায়গায় জন্ম নিবন্ধন কাজ করে থাকে। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয়তা সকলের কাছে খুবই বেশি। কি কি কারনে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়ঃ
- কোন শিশুর জন্য যখন পাসপোর্ট করতে যাওয়া হয় তখন তার পাসপোর্ট করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এর জায়গায় জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হবে। কারন ১৮ বছরের উপরে কারও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয় না। আর তাই ১৮ বছরের আগে কেও পাসপোর্ট করতে চাইলে জন্ম নিবন্ধন কার্ডের প্রয়োজন হবে।
- কোন শিশু যখন ছোট থেকে একটু বড় হওয়ার পরে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর্যায়ে পৌছায় তখন তাকে প্রথমিক স্কুলে ভর্তি করার জন্য অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন কার্ডের প্রয়োজন হয়। তাই শিশু জন্মগ্রহণ কারা ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়।
- বিয়ের সময় বয়স নির্নয় করার ক্ষেত্রে অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রর পাশাপাশি জন্ম সনদেন প্রয়োজন হয়।
- যখন একজন মানুষের ১৮ বছর হওয়ার পরে তার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয় তখন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার জন্য তার জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়। জন্ম সনদ ছাড়া কোনভাবেই জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করা যাবে না।
- অনেকে আছেন যাদের ১৮ বছর হওয়ার সাথে সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয়। কিন্তু ১৮ বছর হওয়ার সাথে সাথে কোন মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র পায় না। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য একটু সময় লাগে। আর তাই তখন তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য অবশ্যই জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।
- অনেকের জমি রেজিস্ট্রার করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র পাশাপাশি জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়।
- প্রায় সকল ব্যাংকে কার্যক্রম করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও জন্ম সনদের প্রয়োজন পড়ে।
- ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) পাওয়ার জন্য জন্ম সনদের প্রয়োজন পড়ে।
- আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা করার জন্য যে লাইসেন্স প্রয়োজন সেটি করতে জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়।
- কোন ব্যবসা করতে যে ট্রেড লাইসেন্সর প্রয়োজন হয়, সেটি পেতে জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়।
জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে কি কি দরকার
জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে হলে যে জন্ম নিবন্ধন নিবন্ধক হয়েছে অর্থ্যাত যিনি জন্ম নিবন্ধন করছেন তার কাছে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে তার সাথে আরও কিছু প্রয়োজনীয় দলিল নিয়ে জমা দিতে হবে।
তাছাড়া জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যক্তির বয়সের অনেক মাপকাঠি রয়েছে। এক এক বয়সের জন্ম নিবন্ধন করার জন্য এক এক ধরনের পেপারের প্রয়োজন রয়েছে।
০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে একটি শিশুর যা যা লাগে
১. এই বয়সের বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার অনলাইন জাতীয় পরিচয়পত্র কপি।
২. শিশুটি যে প্রতিষ্ঠান থেকে জন্ম গ্রহন করেছেন সেই প্রতিষ্ঠার থেকে তার জন্ম সত্যাইতো করার পেপার।
৩. ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি ও তার পাশাপাশি ফোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
৪. যে শিশুটির জন্য জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা হবে তার পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুর জন্ম নিবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে যা যা লাগে
১. EPI Card বা টিকা কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি বা EPI কর্মীর প্রত্যায়ন পত্র।
২. UP Tax স্লিপ অথবা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদের ফটোকপি।
৩. যে শিশুর জন্য আবেদন করা হচ্ছে সেই শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার ইংরেজি ও বাংলা অনলাইন কপি।
৪. আবেদনকারী শিশুর পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
৫ বছর বয়সের বেশি হলে জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা লাগে
১. যে প্রতিষ্ঠানে শিশু জন্ম গ্রহন করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের সত্যায়িত প্রত্যায়ন পত্র অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র।
২. UP পরিশোধের রশিদের ফটোকপি ও তার পাশাপাশি ফোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
৩. বাবা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি।
৪. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
এতক্ষণ ধরে আপনাদের দেখিয়ে দিয়েছি জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজের প্রয়োজন হয়। উপরে যে কাগজগুলোর কথা বলেছি একজন শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে এর থেকে আর বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।