নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় কি সেই সম্পর্কে আমাদের মাঝে অনেকে জানেন না। ফলে তারা নতুন ফোন কিনে করণীয় কি বুঝতে পেরে তাদের শখের মোবাইল টির যত্ন নিতে পারে না। এজন্য আজ আপনাদের দেখাবো, নতুন মোবাইল কেনার পরে কি কি করতে হয় বা নতুন স্মার্টফোন কেনার পর করণীয় কাজ কি। চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে আপনাদের দেখিয়ে দেই, নতুন ফোন কেনার পরে করণীয় কি।
আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ আছেন যারা নতুন মোবাইল কেনার পরে কোন দিকে বেশি নজর দিতে হয় সেই সম্পর্কে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হয়। নতুন মোবাইল কিভাবে যত্ন নিতে হয়।
নতুন মোবাইল কেনার পরে কি কি কাজ করতে হয়, কিভাবে নতুন মোবাইলের যত্ন নিবো সব কিছু আজকের লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করবো।
নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় কাজ কি | নতুন ফোন কেনার পর করণীয়
১. IMEI নাম্বার সংরক্ষণঃ
নতুন মোবাইল কিনে IMEI নাম্বার সংরক্ষণ করা সব থেকে জরুরি কাজগুলোর মধ্যে একটি কাজ। অনেকে আছেন যারা নতুন ফোন কিনে আই এম ই আই নাম্বার সংরক্ষণ করতে ভুলে যান বা অবহেলা করেন। মোবাইল কেনার সাথে মোবাইলের বাক্সে বা মোবাইলের খামের গায়ে IMEI নাম্বার লেখা থাকে।
IMEI নাম্বার সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। আপনি চাইলে IMEI নাম্বার যেকোন জায়গায় লিখে রাখতে পারেন বা কোন ডকুমেন্টে সেভ করে রাখতে পারেন। যা পরবর্তীতে যেকোন প্রয়োজনে খুব কাজে লাগতে পারে।
কেনো IMEI নাম্বার সংরক্ষণ করতে হয়ঃ
আমরা শখের বসে বা নানান প্রয়োজনে অনেক দামি মোবাইল কিনি। কিন্তু এই দামি মোবাইল অনেক সময় চুরি হয়ে যায়। তখন আমাদের খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু তখন যদি আপনার কাছে আপনার মোবাইলের IMEI নাম্বারটি সংরক্ষণ করা থাকে তাহলে থানায় যেয়ে জিডি (GD) বা মামলা করে আসতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি IMEI নাম্বার কোথাও সংরক্ষণ না করেন তাহলে আপনার মোবাইল চুরি হয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন – পল্লী বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নগদ দিয়ে
তাই যখন কোন মোবাইল ফোন কেনার সময় মোবাইলের প্যাকেটের গায়ে IMEI নাম্বার দেখতে পাবেন না তখন বুঝবেন, এই মোবাইলটি চুরি করা না হয় সম্পূর্ণ অবৈধ মোবাইল।
নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হয় যখন আপনি কোন মোবাইল কিনবেন তখন দেখে নিবেন আপনার মোবাইলটি BTRC বৈধতা হয়েছে কিনা।
নতুন মোবাইল কেনার পরে যদি আপনি প্যাকেটের গায়ে IMEI নাম্বার দেখতে না পান তাহলে মোবাইলের ডায়াল প্যাটে যেয়ে *#06# এই কোডটি ডায়াল করুন। *#06# নাম্বার ডায়াল করার পরে একটি নাম্বার দেখতে পাবেন। ওটিই আপনার মোবাইলের IMEI নাম্বার।
নোটঃ যে মোবাইলে ২ টা সিম চালানো যায় সেই মোবাইলে IMEI নাম্বার দুইটা থাকে। তাই *#06# ডায়াল করার পরে যখন আপনার মোবাইলে IMEI নাম্বার দেখা যাবে তা কোথাও লিখে সংরক্ষণ করে রাখুন। যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হলে এটি কাজে লাগে।
২. গুগলের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফারঃ
নতুন মোবাইল কেনার আগে আমরা যে মোবাইলটি ব্যবহার করতাম সেই পুরাতন মোবাইল থেকে নতুন মোবাইলে সমস্ত ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য ডাটা ট্রান্সফার করে নিবেন।
কিভাবে ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন
আপনার যে ব্যক্তিগত জিমেইল একাউন্ট রয়েছে সেটি নতুন মোবাইলে Login করে নিন। পুরাতন মোবাইলে আপনার যত নাম্বার রয়েছে তা সবগুলো নতুন মোবাইলে দেখতে পারবেন।
পুরাতন মোবাইলে যে জিমেইল টি ব্যবহার করতেন সেই জিমেইলটি নতুন মোবাইলে login করুন। এতে করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সকল পুরাতন মোবাইলের ডাটা নতুন মোবাইলে চলে আসবে। শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে নতুন মোবাইলে পুরনো জিমেইলটা সিল্ক করে দিতে হবে।
৩. সিকিউরিটি এক্সেসঃ
নতুন মোবাইল ফোন কেনার সাথে সাথে সেটিতে পিন, পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন দিয়ে দিবেন। তার পাশাপাশি যদি আপনার নতুন মোবাইলে ফেসলক অপশন থাকে তাহলে সেই সিস্টেমটি চালু করে দিন।
আপনার মোবাইলে যদি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি অপশন থাকে তাহলে নতুন মোবাইল কেনার সাথে সাথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেমটি চালু করে রাখেন। তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই দুই হাতের ফিঙ্গার দিতে চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার এক হাতের আঙ্গুলে ব্যাথা লাগলে বা আঙ্গুলে আঘাত লাগলে অন্য হাতের আঙ্গুল দিয়ে মোবাইল আনলক করতে পারবেন।
৪. ব্যাটারির চার্জঃ
নতুন মোবাইল কেনার পরে সব থেকে বড় কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া। নতুন মোবাইল কেনার পরে যদি দেখেন ৭০% থেকে ৮০% চার্জ রয়েছে তাহলে তখন চার্জ না দিলেও চলবে। তবে অনেকে বলেন, নতুন মোবাইল কিনে তাতে যত % চার্জ থাকুক না কেনো, প্রথমেই মোবাইল চার্জে দিয়ে ১০০% করে নিতে হয়।
তবে ব্যাটারি নিয়ে সকলের একটি বিষয় জানে রাখা খুব জরুরি। সেটি হলো, প্রতিটি মোবাইলের ব্যাটারিরি তিনটি স্তর থাকে। যেটিকে ব্যাটারি ব্যাকআপ বলে থাকে। ব্যাটারির দুইটা স্তরের চার্জ ফুরিয়ে গেলে যখন তৃতীয় স্তরের চার্জে মোবাইল চলে তখন সকলের মনে একটি ধারনা হয়, তার মোবাইলের ব্যাটারি ব্যাকআপ কমে গেছে।
আসলে এটি কোন বড় ব্যাপার নয়। মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ প্রথম দিকে সমান ভাবে থাকলেও পরের দিকে স্বাভাবিক ভাবে কমে যায়। এটি প্রতিটি মোবাইলের ক্ষেত্রে সমান। তাই সবসময় মোবাইলে পুর্ন চার্জ করে রাখার চেষ্টা করবেন।
তাই মোবাইলের ব্যাটারি অনেকদিন ভালো রাখতে চাইলে নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতিতে মোবাইল চার্জ দিন। এতে করে আপনার ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
৫. মোবাইল কেস কভার ও স্কিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুনঃ
যারা নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে নতুন মোবাইল ফোন কেনে তারা কাজ করার সময়ে বা বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে দাগ লেগে যায়। তাই নতুন স্মার্টফোন কিনেই এই সমস্ত দাগ থেকে বাঁচার জন্য মোবাইলে অবশ্যই মোবাইলে কেস কভার ও স্কিন প্রটেক্টর ব্যবহার করবেন।
তবে মোবাইলের কভার কেনার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন সেটি যেনো হালকা হয়ে থাকে। ভারী মোবাইল কভার ব্যবহার করলে মোবাইলও বেশ ভারি হয়ে যাবে। যেটি মোবাইল ব্যবহার কারিদের অসুবিধার কারন হয়ে উঠে। তাছাড়া অনেক সময় ভারি কেস কভার মোবাইলকে অনেক গরম করে তোলে যা স্মার্টফোনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৬. অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রিমুভঃ
নতুন মোবাইল কেনার পরে আপনারা তাতে দেখতে পাবেন অনেক নতুন অ্যাপস ইন্সটল দেওয়া। সেই সমস্ত অ্যাপস থেকে যেগুলো মোবাইলে দরকার সেইগুলা রেখে বাকি সমস্ত অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ডিলেট বা আনইন্সটল করে দিন। কারন অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসগুলো তো কোন কাজেই লাগে না, বরং সেইগুলো একটা সময়ে আমাদের অনেক ক্ষতির কারন হয়ে থাকে।
৭. গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপস ইন্সটল দেওয়াঃ
Google Find My Device সহ অনেক সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগে। এটি কোন ভাবে ইন্সটল করতে ভুলবেন না। এটি ছাড়া অনেক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজন অনুযায়ি কাজে লাগে। তখন সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার অবশ্যই মোবাইলে ইনস্টল দিয়ে নিন।
সর্বশেষ কথা
আপনি মনে করেন Samsung Brand এর মোবাইল ব্যবহার করতে। পরে নতুন Nokia Brand এর ফোন কিনেছেন। তখন আপনার প্রথম দিকে নতুন মোবাইল ব্যবহার করতে একটু সমস্যা হতে পারে। তাই নতুন মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই নতুন মোবাইল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এবং নতুন মোবাইল ফোনের ফিচার গুলো অবশ্যই জেনে রাখুন।
নতুন মোবাইলে কোথায় ক্যামেরা রয়েছে, কোথায় ফিঙ্গার রয়েছে, ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে সেই সমস্ত ছোট খাটো বিষয় আগে থেকে জেনে নিন। এতে করে নতুন মোবাইল চালানোর ক্ষেত্রে আপনার কোন প্রকার সমস্যা হবে না।
উপরে আমরা নতুন মোবাইল কেনার পরে করণীয় কি কি বা নতুন ফোন কেনার পরে করণীয় কি তা জানার চেষ্টা করেছি। আশাকরি এখন নতুন মোবাইল কেনার পরে কি কি কাজ করতে হবে তা জানতে পেরেছেন।