আপনার প্রিয় ফোনটি কি ভাবে সঠিক উপায়ে চার্জ করবেন!!

সঠিক উপায়ে মোবাইল চার্জ


কি ভাবে মোবাইল চার্জ দিলে আপনি লং টাইম ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। বর্তমানে আমাদের মধ্যে একটি কমন ভূল ধারনা রয়েছে রাতের বেলায় চার্জে বসিয়ে নিরচিন্তে ঘুমানো যাবে যেহেতু এটা স্মাট ফোন ফুল চার্জ হওয়ার পর নিজে থেকে আর চার্জ নিবে না। কিন্তু আমরা যে চার্জারটি ব্যবহার করছি সেটি কিন্তু স্মাট না বা এখনো পর্যন্ত কোন স্মাট চার্জার ও বের হয়নি। মোবাইলে ফুল চার্জ হয়ে যাওয়ার পরও যখন ফোন চার্জে লাগানো থাকে চার্জার প্রতিনিয়ত ইলেকট্রিসিটি পাস করতে থাকে বা ব্যাটারিতে আরো চার্জ করার চেষ্টা করে। এতে কিন্তু মোবাইল ফোনের ব্যাটারির অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে।

আপনাদের মধ্যে অনেকের আরেকটি ভুল ধারনা রয়েছে যদি ফাস্ট চার্জ দিয়ে ফোন চার্জ দেওয়া হয় তাহলে ফোনটি আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাবে। তো আজকে আপনাদের এই ভুল ধারনা ভুল প্রমান করবো ও কি ভাবে ফোনটি চার্জ দিলে লং টাইম ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

১. ব্যাটারি ম্যাকানিজম অথাত ব্যাটারি কি ভাবে কাজ করে একটু দেখে নিই। উপরের ছবির মাধ্যমে আমরা সবকিছু বুঝতে পারবো ব্যাটারিতে 2 টা পোল থাকে একটি নেগেটিভ পোল ও একটি পজেটিভ পোল। নেগেটিভ পোলে থাকে ফ্রি ইলেকট্রন পজেটিভ পোলে অতো ইলেকট্রন থাকে না। নেগেটিভ পোল থেকে সাধারণত ইলেকট্রন গুলি পজেটিভ পোলে যেতে থাকে। নেগেটিভ পোলের সব ইলেকট্রন চলে গেলে তখন ব্যাটারিটি ০% চার্জ থাকে।  তখন আমরা চার্জার কানেক্ট করি চার্জার ইলেকট্রিসিটি প্রভাইড করে পজেটিভ পোল থেকে ইলেকট্রন গুলো আবার নেগেটিভ পোলে নিয়ে আসে। সব ইলেকট্রন যখন নেগেটিভ পোলে ফিরে আসে তখন ব্যাটারি মোটেও কমফোর্টেবল ফিল করে না তাই বলা হয়ে থাকে ৮০% এর ওপরে ও ২০% এর নিচে ব্যাটারি খারাপ পারফরম্যান্স করে। আবার ইলেকট্রন যখন নেগেটিভ পোলে ৫০% ও পজেটিভ পোলে ৫০% থাকে তখন ব্যাটারি সব থেকে বেশি কমফোর্টেবল ফিল করে।

২. ফাস্ট চার্জার: ফাস্ট চার্জারের কাজ হলো দুটি ফেজে ব্যাটারিকে চার্জ দেওয়া। প্রথম ফেজ এর কাজ হলো ০-৫০% পর্যন্ত দেওয়া ও দ্বিতীয় ফেজের কাজ হলো বাকি ৫০-১০০% পর্যন্ত ব্যাটারিকে চার্জ করা। এখন এই ফাস্ট চার্জের ব্যাটারি গুলোর মথ্যে পজেটিভ ও নেগেটিভ এর মাঝে যে ব্যারিয়ার থাকে সেটি খুব মোটা হয় যার ফলে ভিতরে জায়গার পরিমান কমে যায়। আর এই অল্প জায়গায় ইলেকট্রন না থাকতে পেরে দ্রুত পজেটিভ পোলে চলে যায়। এই কারনে এই সব ব্যাটারি গুলো দ্রুত চার্জ হয়।

এবার আমরা জানবো আমাদের ফোন গুলো সঠিক ভাবে চার্জ করার নিয়ম।

এখনকার যুগে অথার ২০২৩ সেলে যে সব ফোন গুলো এসেছে সব ফোনই মোটামুটি ফাস্ট চার্জিং সিষ্টেম। ১৫  ওয়ার্ড এর উপরে সব চার্জার কে ফাস্ট চার্জার ধরা হচ্ছে। তবে গবেষণা করে দেখা গেছে ৫০% চার্জ তো অনেক কম হয়ে যায় ব্যাটারিতে যদি ৮০% চার্জ থাকে তখন ইলেকট্রন গুলো অনেকটা স্টেবল থাকে অশান্ত হয় না। আপনার ফোনটি যদি ৮০% চার্জ দেন তাহলে ফোনের জন্য ভাল হবে ও বেষ্ট পারফরম্যান্স করবে এবং অবশ্যই আপনার ফোনের ব্যাটারি ২০% এর নিচে নামার আগে চার্জ দিতে হবে। ২০% এর নিচে নেমে গেলে ৫%,৬% বা ফোনটি বন্ধ হয়ে গেলে ফোনের ওপরে বা ব্যাটারির ওপরে খুব খারাপ প্রভাব পড়ে। আপনার একটা জিনিস খেয়াল করবে যে প্রত্যেক মোবাইলে ব্যাটারি চার্জ ২০% এর নিচে নেমে গেলে ফোনটি নোটিফিকেশন করতে থাকে যে চার্জ কমে গেছে। আবার অনেক ফোন ৮০% এর ওপরে চার্জ হয়ে গেলে নোটিফিকেশন দেয়। 

নোটিশ: যদি আপনি আপনার ব্যাটারিটি ভাল রাখতে চান তাহলে ২০% এর নিচে চার্জ আনা যাবে না ও ৮০% এর উপরে চার্জ দেওয়া যাবে না।

ব্যাটারি আগের থেকে কম ব্যাকআপ দিচ্ছে:-

বর্তমান যুগে আমরা যে ব্যাটারি গুলো ব্যবহার করে থাকি সেটি Lithium Ion ও Lithium polimar ব্যাটারি। এই ব্যাটারি গুলো সাধারনত সাইকেল ভিত্তিক চলে। নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ দেওয়ার ফলে ক্ষয় হয়ে যায়। Lithium Ion ও Lithium polimar ব্যাটারির যারা ডেভালপার আছে তাদের তথ্য মতে এই ব্যাটারি গুলো ৫০০ সাইকেল চার্জ করার পর ২০% এদের ক্ষয়  হয়ে যায়। অর্থাৎ ৫০০ সাইকেল চার্জ দিয়ে যদি এর ব্যাকআপ ক্ষমতা ১০ ঘন্টা হয় তাহলে ২০% চার্জ ক্ষয় হয়ে এই ব্যাটারি ৮  ঘন্টা ব্যাকআপ দিবে। ২০% চার্জ ক্ষয় হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু উন্টা পাল্টা ভাবে চার্জ দিতে আরো ক্ষয় হবে ক্ষতি হবে।

iPhone, OnePlus, Samsung কি করে গ্ৰীন লাইন সমস্যা সমাধান করবেন পড়তে এখানে Click Here

নতুন ফোন কেনার পর যে ১০টি কাজ অবশ্যই করবেন পড়তে এখানে Click Here

Samsung Galaxy A34 ফোনের বিস্তারিত পড়তে এই লেখার ওপরে ক্লিক করুন

এখন আসি সাইকেলিং কি?

০-১০০% পর্যন্ত চার্জ দেওয়াকে একটি সাইকেল বলে।

এখন আপনার মাথায় একটি প্রশ্ন জাগতে পারে আমি তো ৪০,৬০ এই ভাবে চার্জ দেই ১০০% করিনা। সাইকেল এমন একটা জিনিস ১০০ না হলে কাউন্ট হয় না। আপনার ৪০+৬০=১০০ একটি সাইকেল।

রাতে ফোন চার্জ দিয়ে ঘুমানো যাবে কি না!

একদমই না ফোন চার্জে রেখে ঘুমাতে যাওয়া যাবে না তার কারন হলো বর্তমান যুগে যে মোবাইল গুলো রয়েছে এগুলো ফুল চার্জ হতে সময় লাগে ২ ঘন্টা 30 মিনিট এর মতো অনেক ফোন এর থেকে কম সময়েও চার্জ হয়ে যায়। চার্জ হওয়ার পর বাকি সময়টা তারা করবে কি চার্জার ইলেকট্রিসিটি পাস করার চেষ্টা করবে ও মোবাইলের যে সেন্সর টা আছে ১০০% চার্জ হওয়ার পর ইলেকট্রিসিটি বাধ দেয়। এর ফলে প্রসেসর এর ওপরে অনেক চাপ আসে কারন যে সেস্নরটি ইলেকট্রিসিটি বাধা দিয়ে থাকে এটি প্রসেসর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর চার্জার সেস্নর এদের ফাইটের ফলে ফোন থেকে চার্জ একটু কমে যাবে ফোনটি আবার একটু চার্জ নিবে আরার কমবে আবার চার্জ নিবে। এই ভাবে ২-৩ মাস প্রতিদিন রাতে চলতে থাকলে এই যে একটু একটু করে চার্জ হয় এক সময় দেখা গেল ১০০-১৫০ সাইকেল হয়ে গেছে আপনি জানতে পারবেন না। তাই ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমানো যাবে না, গেম খেলা যাবে না, চার্জে দিয়ে ফোন ব্যবহার করা যাবে না।

বৈদ্যুতিক Socket Issues:- 

Socket Issues এটি একটি সব থেকে বড় সমস্যা ফোনের ব্যাটারিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য। সকেট কাজ হলো ইলেকট্রিসিটি পাস করা এখন সকেট যদি প্রপারলি ইলেকট্রিসিটি পাস না করে তাহলে চার্জার ও পাবে না। আর চার্জার ঠিক মতো ইলেকট্রিসিটি না পেলে ফোনকে ও ঠিক ভাবে চার্জ করতে পারবে না। অনেক সময় দেখা যায় সকেট অনেক পুরাতন হয়ে গেছে, মাঝেমধ্যে এর ভিতরে সট সার্কিট হয় এই সব সকেটের জন্য চার্জার প্রপারলি ইলেকট্রিসিটি না পেলে ফোনকে ও দিতে পারবে না যার কারনে চার্জার প্রচুর পরিমাণে গরম হয়। অনেক ফোনের চার্জ দেখা যায় এমন গরম হয় তার প্রধান কারণ সকেট। এর ফলে সবার আগে চার্জারটি নষ্ট হয়ে যায় আর একবার চার্জার নষ্ট হয়ে গেলে অরজিনাল চার্জার আর পাবেন না। অনেক সময় ফোনের ব্যাটারি সেস্নর নষ্ট হয়ে যায়। খারাপ সকেটের জন্য ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই। সবাই ভাল সকেট ব্যবহার করবেন পরামর্শ থাকলো।

চিকন পিনের Charger Issue:- 

আজ থেকে ১০ বছর আগে বা ২০ বছর আগে নকেয়া ফোন ছিল আমরা যখন নকেয়া ফোন ব্যবহার করতাম তখন দুই ধরনের চার্জার ছিল একটা মোটা পিনের চার্জার ও একটি চিকন পিনের চার্জার। তো চিকন পিনের চার্জার এর কথা বলার উদ্দেশ্য হলো আমরা যখন বাইরে কোথাও যেতাম বা আত্মীয়দের বাড়ি যেতাম ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে আমরা চিকন পিনের চার্জার খুজতাম। আর তখন সবাই নকেয়া ফোন ব্যবহার করতো তো চিকন পিনের চার্জার পেয়ে যেতাম চার্জ দিতাম। এই যে অন্যের ফোনের চার্জার নিয়ে চার্জ দেওয়া এইটা মটেও করা যাবে না। তখনকার সময় নকেয়া ফোনের চার্জ দিয়ে সব ফোন চার্জ দেওয়া যেত ওয়াট ভোল্টেজ এই ছিল কিন্তু এখনকার সময় সব ফোনের চার্জ এই ওয়াট, ভোল্টেজ দেয় না। আলাদা আলাদা ফোনের জন্য চার্জারের ওয়াট, ভোল্টেজ আলাদা করা হয়েছে তাই সব ফোনের চার্জ দিয়ে চার্জ দেওয়া যাবে না। আপনি যদি রং চার্জার রং ফোনে ব্যবহার করেন ফোনটির ব্যাটারিটি তো যাবে সাথে ফোন ও ডেথ হয়ে যেতে পারে।

সঠিক উপায়ে মোবাইল চার্জ


ডিসপ্লে

মোবাইলের সব থেকে বেশি চার্জ খরচ করে ডিসপ্লে। অনেকে আছে মোবাইলে ১০০% ব্রাইডনেস দিয়ে ব্যবহার করে। আমি নিজেও বুঝিনা তারা এমনটা কেন করে। ১০০% ব্রাইডনেস দেওয়া মানে প্রচুর চার্জ ইউজ হতে থাকে। আপনি প্রয়োজন ছাড়া কখনো ১০০% ব্রাইডনেস ইউজ করবেন না কারন এতে আপনার চোখের ও ক্ষতি সেই সাথে ব্যাটারির ওপরেও প্রচুর চাপ পড়ে। আর আপনারা চাইলে ডার্ক থিম ব্যবহার করতে পারেন এতে করে ফোনের চার্জ বেশি সময় থাকবে।

  1. আপনার বাসায় যদি WIFI থাকে তাহলে WiFi ব্যবহার করা ভাল কারন মোবাইল ডাটা ব্যবহার করলে প্রচুর চার্জ পোড়ে। আপনার ফোনে যতো জি বেশি ততো চার্জ পুড়বে বেশি। 
  2. আর একসাথে রিংটোন, ভাইব্রেশন ব্যবহার করবেন না এতে প্রচুর চার্জ লাগে। ভাইব্রেশন সৃষ্টি করে ফোনের ভিতরে থাকা ছোট একটি মটর এর ফলে আর এটি চললে ভালই চার্জ পোড়ে। 
  3. অনেকে আছেন যারা ফোন ব্যবহার করে রেখে দেন ডিসপ্লে অন থাকে। ডিসপ্লে অন টাইম অনেক সময় এই কাজ গুলো না করে ১০-১৫ সেকেন্ড ডিসপ্লে অন টাইম করে রাখুন ভাল ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন।
  4. প্রয়োজন শেষে ফোনটা অফ করে রাখবেন। যেমন- আপনার এখন প্রয়োজন শেষ ২-৩ ঘন্টা পর ব্যবহার করবেন এমন সময় হলে ফোন অফ করবেন না কারন ফোন অন করার সময় ও প্রচুর চার্জ লাগে।
  5. প্রয়োজন ছাড়া ফোনের ফ্লাস লাইট ব্যবহার করবেন না।

সব কথার শেষ কথা:

  • .৮০% এর উপরে চার্জ দিবেন না।
  • ২০% এর নিচে চার্জ নামাবেন না।
  • ৩. উন্নত মালের সকেট ব্যবহার করুন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

250.250

250.250